আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সোনাদিয়া দ্বীপ।
সামুদ্রিক পাখির বিচরণ, নতুন করে সৃষ্ট প্যারাবনে সবুজের সমারোহ আর সেখানে বসবাসকারী ৩ শতাধিক পরিবারের মানুষের সচেতন কার্যক্রমে দ্বীপটিতে ফিরে আসছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এতে অনেকেই আশাবাদী এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সোনাদিয়া ফিরে পাবে তার সেই পূর্বের রূপ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে তৈরি করা হয় চিংড়ি ঘের। যার প্রভাবে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।
পরে সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে নেকম, আইইউসিএন, এসবিএফ ও হেল্প নামের ৪ টি সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলছে এসব কার্যক্রম।
ধ্বংস হওয়া প্যারাবন নতুন করে সৃষ্টি, সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষা এবং ওই সব প্রাণীর অবাসস্থল উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই এ কার্যক্রমের লক্ষ্য।
সরেজমিন সোনাদিয়া দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, এক সময় লাকড়ি ব্যবহার, চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য যারা দ্বীপের প্যারাবনের উদ্ভিদ নিধন করেছেন, তারাই এখন তা রক্ষায় সচেতনভাবে কাজ করছেন। যার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে নতুন করে তৈরি হয়েছে প্যারাবনের কেউড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতের উদ্ভিদ।
সোনাদিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় নতুন করে তৈরি করা এসব প্যারাবনে গহীন অরণ্যের মতো পরিবেশ দেখা যায়। আর প্যারাবনের ভেতরে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি বসতি গড়েছে। ঝাঁক-ঝাঁক সামুদ্রিক গাঙচিল, মাছরাঙা, ঈগলের বিচরণ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার উপকুলীয় এলাকায় ১ হাজার ২১৫ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিত রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ ৫৬৭, শামুক ১৬২, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার ২, মাছ ২০৭, উভচর প্রাণী ১২, সরীসৃপ ১৯, পাখি ২০৬ প্রজাতের দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে এ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পের অধীনের ইতোমধ্যে সোনাদিয়ায় ১৮৮ হেক্টর ও কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকায় ১০০ একর নতুন প্যারাবন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তা রক্ষা করা হচ্ছে।
প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সুমন বাংলানিউজকে জানান, দ্বীপের বাসিন্দাদের উন্নত চুলা ব্যবহারে উৎসাহী করা, চুলা সরবরাহ, গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রামভিত্তিক কর্মশালা, স্থানীয়দের জীবন উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানা কর্মকান্ডের কারণে জীববৈচিত্র্য রক্ষার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধীনে প্যারাবন পাহারায় কাজ করছেন দ্বীপের ৪ ব্যক্তি। তাদেরই একজন আজিজুর রহমান।
তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যারাবন পাহারা দেন তিনি। প্যারাবন নিধন, পশুদের কবল থেকে প্যারাবন রক্ষার জন্য তিনি সচেতন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ধারাবাহিকভাবে দ্বীপের পুরো অংশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আরও নানান কার্যক্রম চলছে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারের সোনাদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকায় রয়েছে জীববৈচিত্র্যের সমাহার।
তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বে ৪৭৫ প্রজাতের মাছ রয়েছে। এক গবেষণায় কক্সবাজারে ২০৭ ধরনের মাছ দেখা গেছে। তার মধ্যে কোমলাস্থি ১৯ ও কঠিনাস্থি রয়েছে ১৮৮ প্রজাতির।
২০৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে দেশি ১৪৯টি এবং ৫৭ ধরনের অতিথি পাখি দেখা যায়। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় পাখিদের অনেক প্রজাতি কক্সবাজারে রয়েছে। এসব রক্ষায় চলছে তাদের কার্যক্রম।
Blogger Comment
Facebook Comment