কক্সবাজার শহরের 'রোহিঙ্গা ডিপো'

মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতার আগেও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কৌশলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এ দেশে। এক প্রকার ফ্রি স্টাইলে রোহিঙ্গাদের যাতায়াত আছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর বিশাল পাহাড়ি এলাকা। রোহিঙ্গাদের কারণে উক্ত এলাকায় স্থানীয় লোকজন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে! মাত্র এক দশকের ব্যবধানে দক্ষিণ পাহাড়তলী ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর, বার্মাপাড়া, জিয়ানগর, হালিমাপাড়া, ইসুলুঘোনা, ফাতেরঘোনাসহ বিশাল পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের জাল। এলাকাটি বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ডিপোতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পর্যটন শহরের নানা অপরাধ।
হালিমাপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি আবদুশ শুক্কুর (৬৫) জানান, এক দশক আগেও শহরের পাশে দক্ষিণ পাহাড়তলীতে স্থানীয় লোকজনের বসবাস ছিল হাতেগোনা। এখন সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। এমনকি ওই এলাকার পাশেই ইসলামপুর, বার্মা পাড়া, হালিমাপাড়া, জিয়া নগর, ইসুলুঘোনা, ফাতেরঘোনাসহ বেশ কয়েকটি পাড়া গড়ে ওঠে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। রোহিঙ্গারা সেখানে পাহাড়ের পর পাহাড় নিধন করে হাজার হাজার ঘর গড়ে তুলেছে।
তিনি আরো জানান, এখানে নিয়মিত রোহিঙ্গারা আসেন। তারা প্রথমে ভাড়া বাসা ও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান করেন। সেখান থেকে পাহাড় দখল, কখনো কখনো পাহাড়ের দখল ক্রয় করে বাসা-বাড়ি তৈরি করেন। অনেকে সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়।
হালিমাপাড়া সমাজ কমিটির সহ-সভাপতি মৌলভী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব পাড়ায় প্রায় প্রতিদিন ১০/১২ জন করে রোহিঙ্গা আসে। তারা ভাড়া বাসা ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত। তিনি জানান, শহরের পাহাড়ি এসব এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে। দিন দিন বাড়ছে রোহিঙ্গাদের বসতি। তারা সরকারি খাস জমি ও বন বিভাগের পাহাড় কেটে তা দখল করে বসবাস করছে। অথচ সেখানে প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকরা বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের কাছে স্থানীয়রা অনেকটা অসহায় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এলাকায় এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, জরুরি অবস্থার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাই কমিটিতে আমি সদস্য ছিলাম। সেখানে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সমর্থন না দেওয়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনেই রোহিঙ্গারা আমার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তিনি আরো বলেন, এসব এলাকায় বর্তমানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বিহীনভাবে বসবাস করছে। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে ও ভোটের রাজনীতির কারণে কতিপয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। এ ধরনেরও শত শত রোহিঙ্গা এলাকায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
জিয়ানগর সমাজ কমিটির সভাপতি সোহেল বলেন, এলাকায় ভাসমান রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি। এরা উক্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো অভিযান না থাকায় তারা এলাকায় এসে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, রোহিঙ্গারা উক্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্রুপের সদস্যরা পর্যটন শহরের বিভিন্ন স্পটে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে এসব এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে অসহায়।
সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা ইসুলুঘোনার নুরুল ইসলাম নিজেকে মিয়ানমারের নাগরিক নয় দাবি করে বলেন, তার প্রকৃত গ্রামের বাড়ি টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায়। তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কাছে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট আছে।' তবে তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কঙ্বাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'কঙ্বাজারের আইনশৃঙ্খলা অবনতির পেছনে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি জড়িত। তারা খুন, ছিনতাই, মাদক পাচার, চুরি, ডাকাতি, জমি দখলসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না। জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলার অধিকাংশ অপরাধের সাথে রোহিঙ্গারা জড়িত বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।'
এছাড়া রোহিঙ্গারা গাছকাটা, পাহাড়কাটা থেকে শুরু করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে জড়িত বলে মনে করেন কঙ্বাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment