সৈকতে ভাসছে মৃত কচ্ছপ-জেলি ফিশ

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন উপকূলের সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভেসে আসছে মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ।
সাগরে দেশি-বিদেশি মাছ ধরা ট্রলারে এগুলো আটকা পড়লে জেলেরা তা পিটিয়ে মারেন। পরে সেগুলো সৈকতে ভেসে ওঠে।


এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে মাছ শিকারের জন্য বড় বড় জাল ব্যবহার করছেন জেলেরা। এসব জালে আটকা পড়া কচ্ছপ ও জেলি ফিশ দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। এরপর সেগুলো মারা যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কচ্ছপ সমুদ্রের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে আর জেলি ফিশের ডিম ও বাচ্চা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হওয়ায় এগুলো মাছের বংশবিস্তারে সহায়তা করে। তাই কচ্ছপ ও জেলি ফিশ রক্ষা করা না গেলে মাছের সংকট দেখা দিতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে টেকনাফে সমুদসৈকতের শাহপরীর দ্বীপ, খুরের মুখ, মহেশখালিয়াপাড়া, লম্বরী, মিঠাপানির ছড়া, রাজার ছড়া, কচ্ছপিয়া, জাহাজপুরা, বড় ডেইল, শীলখালী ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি মৃত কচ্ছপ ও দেড় শতাধিক জেলি ফিশ ভেসে উঠেছে। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির (৪৫) বলেন, মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ সৈকতে পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এগুলো পুঁতে ফেলার কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে খোলামেলাভাবে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত উপকূলের ৫৮ কিলোমিটার এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলার ও ছোট-বড় নৌকায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কচ্ছপ শীত মৌসুমে প্রজননের সময় বালুময় সৈকতে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে। এ সময় অধিকাংশ মা-কচ্ছপ জেলেদের মাছ ধরার জাল ও ট্রলারের কারণে বিপদে পড়ে। যন্ত্রচালিত ট্রলারগুলোর চলাচলের সময় আঘাতে মারা পড়ছে অনেক মা-কচ্ছপ। এ ছাড়া জেলেদের জালে আটকা পড়ে প্রচুর কচ্ছপ, যার বেশির ভাগই তাঁদের হাতে মারা পড়ে।
এ প্রসঙ্গে শাহপরীর দ্বীপের জেলে সেলিম উল্লাহ বলেন, বড় কচ্ছপ জালে আটকা পড়লে জাল ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেগুলো মেরে ফেলা হয়। আটকা পড়া কচ্ছপ ও জেলি ফিশের ওজন ১৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। পুরো কক্সবাজার জেলায় উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে কচ্ছপের ডিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ছোট-বড় কচ্ছপে ডিম থাকে ৩০০ থেকে ৪০০টি। এসব ডিম বস্তায় ভরলেও ভাঙে না। কারণ, এগুলো রাবারের মতো নরম। পরে এসব ডিম ঘাটে এনে বিক্রি করা হয়।
টেকনাফের পরিবেশ অধিদপ্তরের সিবিএইসিএ প্রকল্পের প্রশাসনিক সহকারী সাঈদ আল শাহীন প্রথম আলোকে জানান, এ এলাকায় কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য ১৭টি গ্রামে কমিটি রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রায় চার হাজার বাচ্চা সাগরে ছাড়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন উপকূলীয় এলাকার কারেন্ট জাল ও ট্রলারের জালে আটকে পড়ে কচ্ছপ ও জেলি ফিশ মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করলেও এর ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু বর্তমানে সেন্ট মার্টিনে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার প্রায় বন্ধ বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা ইসিএ কমিটির সভাপতি আ ন ম নাজিম উদ্দিন জানান, উপকূলীয় এলাকায় মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ ভেসে আসার খবর তাঁরা পেয়েছেন। অবৈধ কারেন্ট জালের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জালে ডিম ছাড়তে আসা মা-কচ্ছপ আটকা পড়লে এগুলো যাতে মারা না হয়, সে ব্যাপারে জেলেদের উদ্বুদ্ধকরণে জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Anonymous

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment