দুই জেলায় তামাকচুল্লি বানাতে দেড় লাখ গাছ

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার আট উপজেলায় এ বছর ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। প্রতি আড়াই একর বা এক হেক্টর জমির তামাকপাতা শুকাতে একটি চুল্লি লাগে।

সেই হিসাবে এই দুই জেলায় প্রায় ১৮ হাজার চুল্লি বানাতে হয়েছে। একটি চুল্লি তৈরিতে মাঝারি আকৃতির আটটি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ লাগে। সেই হিসাবে এবার শুধু তামাকচুল্লি তৈরির জন্য এক লাখ ৪৪ হাজার গাছ কাটা পড়েছে।
প্রতিটি চুল্লিতে মৌসুমে গড়ে ৫০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সেই হিসাবে ১৮ হাজার চুল্লিতে এবার ৯০ লাখ মণ কাঠ পুড়ছে। এই গাছ ও কাঠ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় তামাক চাষি ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। বর্তমানে এ দুই জেলার ৭০ শতাংশ জমির তামাকপাতা তোলা হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তামাকচুল্লি থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যহানি যেমন বাড়ছে, তেমনি বায়ুদূষণও হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণকারী এসব চুল্লির মালিকদের তালিকা তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুই জেলায় ১৮ হাজার তামাকচুল্লি রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পকারখানা ও ইটভাটা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের যেমন ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক, তামাকচুল্লির ক্ষেত্রেও পরিবেশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের উপপরিচালক নরেশচন্দ্র বারই জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিভাগ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তার পরও তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তামাক চাষের জমির প্রকৃত হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া, রাজারকুল, কচ্ছপিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আদর্শগ্রাম, সদর, বাইশারী, ঘুমধুমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চুল্লি তৈরি করে শুকানো হচ্ছে তামাকপাতা। অধিকাংশ চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। বেশির ভাগ চুল্লি বাঁকখালী নদীর দুই তীরে স্থাপন করা হয়েছে।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামের একটি চুল্লিতে তামাকপাতা শুকাচ্ছিলেন মমতাজ আহমদ। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় কাশছিলেন তিনি। মমতাজ বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় ফসলের মাঠে কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করছি। তামাকের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তামাকের আবাদ আর করব না বলে ঠিক করেছি।’ একটি চুল্লি তৈরিতে কমপক্ষে আটটি গাছ লাগে বলে জানান এই তামাক চাষি।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এম খালেক খান জানান, কাঠ পুড়িয়েই চুল্লিতে তামাক উৎপাদন করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার জন্য বনপ্রহরীদের রাত-দিন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির আদর্শ গ্রামের তামাক চাষি আবুল মনজুর জানান, দশ ফুট দীর্ঘ, আট ফুট প্রস্থের মাটির ছোট ও উঁচু একটি ঘরকে তামাকচুল্লি বানানো হয়। ওই আকৃতির একেকটি চুল্লি বানাতে আটটি গাছ লাগে। সাধারণত মাঝারি আকৃতির ইউক্যালিপটাস, আকাশমণিগাছ চুল্লি বানানোর কাজে ব্যবহূত হয়। তবে অনেকে সংরক্ষিত বন থেকে গাছ কেটে এনেও চুল্লি বানায়।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা জানান, দুই জেলার প্রধান দুই নদী মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরে কম করে হলেও ৩০ হাজার একর জমিতে আগে ধানসহ মৌসুমি রবিশস্যের চাষ হতো। কয়েক বছর ধরে সেখানে তামাকের চাষ হচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কাজল কান্তি বড়ুয়া জানান, তামাক চাষের কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ইটভাটার মতো তামাকচুল্লি তৈরির আগে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বনও রক্ষা পাবে বলে মত দেন তিনি।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment