প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামঃ পরিস্থিতি চরম অবনতি

রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামা ছিল বন্ধ।

বিকেলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত রাতে ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো শহরই কার্যত বিচ্ছিন্ন। পাহাড় ধসে ও দেওয়াল চাপায় মারা গেছেন অন্তত ১১জন।
নগরের বাকুলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গতকাল বিকেল থেকে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর এসব এলাকা পানির সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। শহরের দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাওয়ায় নগরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রিকশাই ছিল একমাত্র ভরসা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে রেকর্ড ৩৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারা দিনে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক, উপসড়ক, অলিগলি ডুবে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, খতিবেরহাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, আছদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, ট্রাঙ্ক রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মোগলটুলী, হালিশহর, এক্সেস রোড, ডিসি রোড, ষোলশহর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, নালাপাড়া, মুরাদপুর, প্রবর্তক, কাপাসগোলা, বাদুড়তলাসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

চকবাজারের নাসির কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাসায় হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছে বাসিন্দারা। এই বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকা খ্যাত নগরের আসকার দীঘিরপাড়, জামালখান, লালখান বাজারেও পানি উঠেছে। জামালখানের বাসিন্দা সৌমেন দত্ত জানান, ভারী বর্ষণের কারণে নালা ডুবে গিয়ে তাঁদের বাসায় পানি ঢোকে। এতে বাসার আসবাব নষ্ট হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম বন্দর: চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বৃষ্টির কারণে বহির্ণোঙরে ১৩টি জাহাজ থেকে মালামাল খালাস হয়নি। বহির্ণোঙর থেকে বন্দর জেটিতে গতকাল আটটি জাহাজ ভেড়ার কথা ছিল, কিন্তু ভিড়েছে মাত্র চারটি। একটি জাহাজ বন্দর জেটি ছেড়ে গেছে। কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার রবিউল হোসেন বলেন, ‘রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় বিকেল সাড়ে চারটা থেকে বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রানওয়ের বাতি থেকে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর পানি নেমে গেলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তাতেও স্বাভাবিক হয়ে আসতে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা তো লাগবেই।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারী এলাকায় রেললাইন তলিয়ে যায়। ফলে কুমিরা ও ভাটিয়ারীর মাঝামাঝি জায়গায় ৩৪ নম্বর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকাগামী তূর্ণা ও ঢাকা মেইল ও সিলেটগামী উদয়নের যাত্রা বাতিল করা হয়। একইভাবে ঢাকা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে ভিড়তে পারেনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান হায়দার বলেন, ‘বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারি স্টেশনের মাঝামাঝি ৩৪ নম্বর রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা সন্ধ্যার পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বাতিল করেছি।’

পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী রইসউদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে সাব-স্টেশন ও বিতরণকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছি। আরও কিছু এলাকায় ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment