প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ চলছেই

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় নতুনভাবে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।

প্রকাশ্যে পরিবেশ ধ্বংস করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রায় ১০০ একরের বনভূমি জবরদখল করে এ চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। তবে বেশ কয়েকবার স্থানীয় বনকর্মীরা বাঁধা দিলেও তা উপেক্ষা করে ভূমিদস্যুরা কাজ চালাচ্ছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকার মোসখালী খালের পাশে প্যারাবন নিধন করে দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনভূমি জবরদখল করে অবৈধভাবে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। প্রায় একশ' একরের এ ঘের করতে ইতিমধ্যে তিন হাজারের অধিক বাইন গাছ কাটা পড়েছে। আর দিনদুপুরে প্যারাবন কেটে ঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নির্বিচারে প্যারাবন নিধন করার ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ঘটিভাঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকাশ্যে প্যারাবন নিধন করেই স্থানীয় আবদুুল মালেকসহ বেশ কয়েকজন মিলে দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় ১০০ একরের একটি চিংড়ি ঘের করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে প্যারাবন নিধন করে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মী ও পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু কয়েক দিন বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও আবার শতাধিক শ্রমিক দিয়ে ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হলেও তা দেখার কেউ নেই।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা গেছে , 'বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫'-এর আওতায় ১৯৯৯ সনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সোনাদিয়া দ্বীপ ও এর পাশের ঘটিভাঙ্গা মৌজাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ইসিএর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও এর সহযোগী সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) ও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশন (এসবিএফ) কাজ করছে। আর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সোনাদিয়া দ্বীপের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও সৃজন, বালিয়াড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও সৃজন, সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ নিয়ে দল গঠন ও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে। আর ইসিএর প্যারাবন নিধন করে অবৈধ চিংড়ি ঘের নির্মাণ ও পরিবেশ নষ্ট করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৫(১) ও ৫(৪) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগী এনজিও সংস্থা সুখী বাংলা ্ফাউন্ডেশনের জীববিদ আবদুুল কাইয়ুম বলেন, প্রায় একশ' একরের মতো চিংড়ি ঘের করার জন্য ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন উজাড় করেই বাঁধ নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, গত ২৮ মে সরেজমিন গিয়ে ওই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিই এবং জবরদখলকারীদের পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিচ্ছিন্নভাবে প্যারাবন নিধন করেই ওই প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘটিভাঙ্গা বিট কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মীরা বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু বনকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করেই ভূমিদস্যু আবদুুল মালেকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোক বনভূমি জবরদখল করেই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু লোকবল চরম সংকটের কারণে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে বনভূমি রক্ষা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, প্যারাবন নিধন করে নতুন করে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগে ভূমিদস্যু আবদুল মালেকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বন ও পরিবেশ আইনে আদালতে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউসার হোসেন বলেন, ঘটিভাঙ্গায় নতুন করে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment