উখিয়ায় হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য রোহিঙ্গারা তৎপর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসরত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা স্থানীয় দালালদের ম্যানেজ করার জন্য বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ঢুকে পড়ছে।
তারা যে কোনো উপায়ে নাগরিকত্ব লাভের জন্য হালনাগাদ কার্যক্রমকে মোক্ষম সময় বলে ধারণা করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। এ মুহূর্তে স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন না করলে রোহিঙ্গারা যে কোনো উপায়ে ভোটার হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে বলে দাবি করছেন সচেতন মহল।জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রণীত হালনাগাদ ভোটার তালিকায় এ উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫০৯ জন ভোটার রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসে। পরে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণাদি না পাওয়ায় ৫ হাজার ৮৩৬ জনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেন নির্বাচন অফিসার। যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা নাগরিক বলে প্রামাণিত হয়েছে। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটারকে শনাক্ত করে তাদের হালনাগাদ ভোটার তালিকা হতে বাদ দেওয়া হয়। এ ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১২টি উপজেলাকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেন। এসব উপজেলা হচ্ছে, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, বান্দরবান জেলা সদর, আলী কদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই।
গত বুধবার ইসি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় ইসি সচিবালয়ের সচিব ড. মো. মাফিক বলেন, বর্তমান হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে ভোটার হতে না পারে সে ব্যাপারে ১২টি স্পর্শকাতর উপজেলার জন্য বিশেষ ভোটার তথ্য ফরম ছাপানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জুলাই রোববার থেকে এ উপজেলার হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। নির্বাচন অফিসার সাইদ মোহাম্মদ আনোয়ার খালেদ বলেন, ইতিমধ্যে ১৪ সুপারভাইজার ও ৬২ তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ১০ দিনব্যাপী ভোটার নিবন্ধন, ভোটার স্থানান্তর, আইডি কার্ড বিতরণ, মৃত ব্যক্তি শনাক্তকরণসহ নাম কর্তন ও নতুন ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ করবেন। এ সময় রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে সুপারভাইজার ও তথ্য সংগ্রহকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য এ উপজেলা কুতুপালংয়ে অবৈধভাবে বসবাসরত ৬০ হাজার রোহিঙ্গাসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক তৎপর হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন কুতুপালং বাজার ঘুরে দেখা যায়, শতাধিক ইন্টারনেটের দোকানে চলছে নানা ধরনের সনদপত্র তৈরির কাজ। তারা স্থানীয় দালালদের ম্যানেজ করে জন্ম সনদপত্র সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই বস্তি ছেড়ে লোকালয়ে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে তদবির চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা হালনাগাদ ভোটার হওয়ার মোক্ষম সময় মনে করে রোহিঙ্গারা মোটা অঙ্কের মিশন নিয়ে ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহকারীর বাড়িতে ধরনা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেছেন, একজন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে প্রমাণিত হলে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ইউএনও মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন যে বিশেষ ফরমগুলো সরবরাহ দিয়েছে, তা যথাযথ ব্যবহৃত হলে রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
Blogger Comment
Facebook Comment