কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে বিড়ম্বনাঃ সৈকতের ঝাউবাগান দখল করে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশে সৃজিত ঝাউবাগান দখল করে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর গড়ে উঠেছে। এতে ঝাউগাছ উজাড়ের পাশাপাশি ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা নিরাপদ ভ্রমণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। শ্রীহানি ঘটছে সৈকতের।
গতকাল শুক্রবার সকালে শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, ঝাউবাগানের ভেতরে একাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করে লোকবসতি ও ব্যবসা করছেন বহিরাগত কিছু তরুণ। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে এসব দোকানে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাতে পর্যটকেরা সমুদ্র দেখার জন্য এই সৈকতে নেমে ছিনতাইকারী ও বখাটেদের কবলে পড়ছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট, বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট, সি-ইন পয়েন্ট, চরপাড়া ও সমিতিপাড়া এলাকার ঝাউবাগানের ভেতরে নতুন করে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি তৈরি হয়েছে। ইনানী, সোনারপাড়া ঝাউবাগানের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বাগানের ঝাউগাছ কেটে এসব ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে উপকূল বিলীন হচ্ছে। সমুদ্রতীরের ঝাউবাগানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই।
ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্টের উত্তরে সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, কলাতলী, আদর্শগ্রাম, বড়ছড়া, সোনারপাড়া, ইনানী, ছোয়ানখালী, ছেপটখালী, মনখালী, বাহারছড়া, বড়ডেইল, হাবিরছড়াসহ টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার সৈকতের ঝাউবাগান দখল করে তৈরি করা হয়েছে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর।
গত বুধবার দুপুরে শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সোনারপাড়া সৈকতের ঝাউবাগানে গিয়ে অসংখ্য কুঁড়েঘর দেখা গেছে। একটি ঘরের মালিক দাবিদার স্থানীয় সৈয়দ উল্লাহ বলেন, সাগর থেকে চিংড়ির পোনা ধরার জন্য ঝাউবাগানের ভেতরে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রায় চার মাস ধরে ওই ঘরে আছেন তিনি। চিংড়ির পোনা ধরে দৈনিক ৮০০ থেকে চার হাজার টাকা তাঁর আয় হয়। আরেকটি ঘরে বাস করছেন মিয়ানমারের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক (৩৪)। তিনি বলেন, ঝাউবাগানের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কয়েক শ রোহিঙ্গা পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। সাগর থেকে রাত-দিন সমানে চিংড়ির পোনা ধরেই তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ পর্যন্ত কেউ তাঁদের উচ্ছেদ বা পোনা ধরতে নিষেধ করেনি।
সৈকতে পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি আসাদ করিম চৌধুরী বলেন, গত ১১ আগস্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে সৈকতের সমিতিপাড়া ও কলাতলী ঝাউবাগানের ভেতর থেকে অর্ধশত ঝুপড়িঘর উচ্ছেদ করেছে। অন্যান্য স্থাপনাও শিগগির উচ্ছেদ করা হবে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এখন সৈকতে ভ্রমণ করছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় দুই লাখ পর্যটক। অবৈধ বস্তি, মাদকের আখড়া তৈরি, পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপকর্মের জন্য পর্যটকেরা সুন্দর এই ঝাউবাগানে ঢুকতে অস্বস্তি বোধ করে। সন্ধ্যার পর থেকে নির্মল ঝাউবাগান অনিরাপদ হয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) বিপুল কৃঞ্চ দাশ বলেন, ঝাউবাগান থেকে প্রায় সময় অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু চিংড়ির পোনা ধরার জন্য রোহিঙ্গারা আবার বসতি গড়ে তোলে। ঝাউবাগানের রক্ষাণাবেক্ষণ বন বিভাগ করলেও ভূমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বেশি তৎপর হতে হবে।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment