আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকারের 'জরুরি প্রকল্প' কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন কাজ শুরু করতেই তিন বছর পার হয়ে গেছে। তিন বছর পর দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে অযোগ্য ঘোষণা এবং
দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিতে না পেরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক এই দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। দরপত্র চূড়ান্ত করতে কত সময় লাগবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। পর্যটন শিল্প বিকাশ ও সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর দেশের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ইতিমধ্যে ব্যয় বেড়ে গেছে ১২২ কোটি টাকা। নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সালে অনুমোদনের সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় সর্বনিম্ন দর পড়েছে ৪২৪ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলন থেকে ১২২ কোটি টাকা বেশি। এর পরও ১৪ মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ডিজেলের দাম বাড়ায় ব্যয় আরও ৮ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়ে চিঠি দেয় প্রথম দফায় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কুয়ান্তা। এতে ব্যয় বাড়বে আরও ৩২ কোটি টাকা। সব মিলে এখনই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব আতাহারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আগের দরপত্র বাতিল করে এ কাজের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে 'জরুরি ভিত্তিতে' প্রকল্পটি ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২২ মার্চ দরপত্র মূল্যায়ন করে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত করা হয় তুরস্কের কুয়ান্তা আইএনসি কনস্ট্রাকশনকে। তাদের দর ছিল ৪২৪ কোটি টাকা (দেশি-বিদেশি মুদ্রায়)। গত ২ এপ্রিল এই প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদনের জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব পাঠায় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে। ফাইলটি সেখানে পড়ে থাকে প্রায় দুই মাস। এরপর বিমানমন্ত্রীর সুপারিশসহ তা অনুমোদনের জন্য গত ২৮ মে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাওয়ার পর প্রভাবশালী একটি মহল কুয়ান্তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা এএমএল-টিআরসিএসবি নামের একটি যৌথ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে তৎপরতা শুরু করে। ৫৭ কোটি টাকা বেশি দরে কাজ দিলে পরে তা দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে_ এ আশঙ্কার কথা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে নিজেদের অসম্মতির কথা জানায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। বৈদেশিক মুদ্রা সংক্রান্ত জটিলতাও এ সময় সামনে আসে। প্রকল্পের প্রাক্কলনে বৈদেশিক মুদ্রার বরাদ্দ ধরা হয় এক লাখ মার্কিন ডলার। সর্বনিম্ন দরদাতা কুয়ান্তা বৈদেশিক মুদ্রায় দর দিয়েছে ৬৯ লাখ ডলার। আর এএমএল-টিআরসিএসবির দর হলো দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার।
গত ২০ জুন ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই দরপত্রে দুর্নীতির আশঙ্কা খতিয়ে দেখতে তা দুদকে পাঠানো ও পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেননি। কেন দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহ্য করা হচ্ছে না_ সে ব্যাখ্যা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। কার্যবিবরণীর ৭৩ অনুচ্ছেদ পড়ে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, যেটার দরপত্রে দাম কম সেটা বাদ দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? অভিজ্ঞতাও রয়েছে, দূতাবাসের
চিঠিতে তা উল্লেখ আছে। কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠান। ওই সারসংক্ষেপে কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের দর প্রস্তাবের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলা হয়, কক্সবাজার ক্রয় প্রস্তাব এর আগেও ক্রয় কমিটিতে ২০ মে বিবেচিত হয়। ওই সময় প্রস্তাবটি ঠিকমতো উপস্থাপন করা হয়নি বিধায় পুনর্বিবেচনা করে যথাযথ প্রস্তাব পেশ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২০ জুন কক্সবাজার বিমানবন্দর বিষয়ক ক্রয় প্রস্তাব ৬ নং আলোচ্য বিষয় ক্রয় কমিটিতে পুনর্বিবেচিত হয়। তারা আগের সভায় যেসব ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তার মধ্যে দুটি বিষয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেন। অভিজ্ঞতা সনদে যে ব্যাখ্যা দেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। ক্রয় কমিটি এই অভিজ্ঞতার প্রত্যয়ন গ্রহণ করেনি। আলোচনায় আরেকটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে, কুয়ান্তা প্রতিষ্ঠানের বৈধ বিড বন্ড নেই। তাদের ব্যাংক গ্যারান্টি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাই প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করলেও এটি গ্রহণের সুযোগ নেই বলে ক্রয় কমিটি নতুন করে দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয়।
গত এপ্রিলে কুয়ান্তার বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা নেই বলে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিটিপিইউ) রিভিউ প্যানেলের কাছে অভিযোগ করে এএমএল-টিআরসিএসবি। গত ৮ মে রিভিউ প্যানেল আদেশ দেয়, কুয়ান্তা ইরাকে মার্কিন বাহিনীর কিরকুক ও তাজি বিমান ঘাঁটির নির্মাণ কাজ করেছে। এ অবস্থায় কুয়ান্তাকে যোগ্য বিবেচনা করা বেআইনি হয়নি।
গত ২০ জুন ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই দরপত্রে দুর্নীতির আশঙ্কা খতিয়ে দেখতে তা দুদকে পাঠানো ও পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেননি। কেন দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহ্য করা হচ্ছে না_ সে ব্যাখ্যা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। কার্যবিবরণীর ৭৩ অনুচ্ছেদ পড়ে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, যেটার দরপত্রে দাম কম সেটা বাদ দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? অভিজ্ঞতাও রয়েছে, দূতাবাসের
চিঠিতে তা উল্লেখ আছে। কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠান। ওই সারসংক্ষেপে কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের দর প্রস্তাবের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলা হয়, কক্সবাজার ক্রয় প্রস্তাব এর আগেও ক্রয় কমিটিতে ২০ মে বিবেচিত হয়। ওই সময় প্রস্তাবটি ঠিকমতো উপস্থাপন করা হয়নি বিধায় পুনর্বিবেচনা করে যথাযথ প্রস্তাব পেশ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২০ জুন কক্সবাজার বিমানবন্দর বিষয়ক ক্রয় প্রস্তাব ৬ নং আলোচ্য বিষয় ক্রয় কমিটিতে পুনর্বিবেচিত হয়। তারা আগের সভায় যেসব ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তার মধ্যে দুটি বিষয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেন। অভিজ্ঞতা সনদে যে ব্যাখ্যা দেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। ক্রয় কমিটি এই অভিজ্ঞতার প্রত্যয়ন গ্রহণ করেনি। আলোচনায় আরেকটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে, কুয়ান্তা প্রতিষ্ঠানের বৈধ বিড বন্ড নেই। তাদের ব্যাংক গ্যারান্টি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাই প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করলেও এটি গ্রহণের সুযোগ নেই বলে ক্রয় কমিটি নতুন করে দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয়।
গত এপ্রিলে কুয়ান্তার বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা নেই বলে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিটিপিইউ) রিভিউ প্যানেলের কাছে অভিযোগ করে এএমএল-টিআরসিএসবি। গত ৮ মে রিভিউ প্যানেল আদেশ দেয়, কুয়ান্তা ইরাকে মার্কিন বাহিনীর কিরকুক ও তাজি বিমান ঘাঁটির নির্মাণ কাজ করেছে। এ অবস্থায় কুয়ান্তাকে যোগ্য বিবেচনা করা বেআইনি হয়নি।
Blogger Comment
Facebook Comment