নারীশিক্ষায় পিছিয়ে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ!

কক্সবাজার জেলার নারীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ। আর ওই কলেজটি নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত।
কলেজটিতে শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, আবাসন সংকট, নিয়মিত অধ্যক্ষের অভাবসহ নানান সমস্যা ও সংকট নিয়ে চলছে কক্সবাজারের নারীদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি।

সরকার যেখানে নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে এ কলেজটিতে নারীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধার অভাবে সমাজ থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছেন।

অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, এ কলেজটিতে গড়ে ১শ ২৯ জন ছাত্রীর জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর শিক্ষকের জন্য মঞ্জুরি করা ২২টি পদের মধ্যে ১১টি পদই শূন্য।

কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রে নতুন বাহারছড়া এলাকার বিমান বন্দর সড়কে অবস্থিত কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ। ১৯৮৬ সালে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর ১৯৯৭ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়। আর চলতি বছর থেকে এ কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটিতে বর্তমানে ১ হাজার ৪শ ছাত্রী রয়েছেন। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯শ ৮ জন এবং স্নাতক শ্রেণীতে ৪শ ৯২ জন ছাত্রী রয়েছেন। অথচ এর বিপরীতে কলেজে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১১ জন।

কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ আহমদ নবী বাংলানিউজকে বলেন, “কলেজে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ১১টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।”

তিনি বলেন, “গত ৮ মাস ধরে অধ্যক্ষের পদসহ দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগে ৩টি পদের মধ্যে ৩টিই শূন্য। এর ফলে, অর্থনীতি বিভাগে পাঠদান বন্ধই বলা চলে। গণিত বিভাগের জন্যও কোনো শিক্ষক নেই। ২টি পদ থাকলেও ওই পদে কোনো শিক্ষক নেই। রসায়ন বিভাগে ২টি পদের মধ্যে ২টিই শূন্য।

এছাড়া পদার্থ বিজ্ঞানে ২টি পদের মধ্যে ১ জন কর্মরত রয়েছেন। জীববিজ্ঞানে ২টি পদের মধ্যে ১টি, ইসলামের ইতিহাসে ২টি পদের মধ্যে ১টি, দর্শনে ২টি পদের মধ্যে ১টি, ইংরেজিতে ৩টি পদের মধ্যে ২টি, বাংলা বিষয়ের ৩টি পদের মধ্যে ২টি পদই শূন্য রয়েছে।

কলেজের ছাত্রী আফরোজ নাসরিন বাংলানিউজকে জানান, কলেজের ১ হাজার ৪শ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করছেন মাত্র ১ জন শিক্ষক। গত জুলাই মাসে ইংরেজি বিষয়ে ২ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও সচ্ছিনানন্দ পালকে চাঁদপুর সরকারি কলেজে বদলি করার কারণে তার পদটি শূন্য রয়েছে।

তিনি জানান, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজটিতে ১ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা গড়ে ১২৯ জন। নামেমাত্র সরকারি হলেও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে এ কলেজটিতে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট আরও তীব্র। শিক্ষার্থীর জন্য হোস্টেল ব্যবস্থা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। হোস্টেলের ধারণ ক্ষমতা ৬৮ জন হলেও বর্তমানে হোস্টেলে থাকেন ১শ ৭০ জন ছাত্রী।

কলেজের ছাত্রী নীলা বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের এপ্রিলে কক্সবাজার এসেছিলেন। তিনি ওই সময় হোস্টেল সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে, শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রমের সমস্যার পাশাপাশি আবাসন সংকট ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বাংলানিউজকে জানান, কলেজটি চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। কিন্তু তিনিও নিয়মিত কলেজে উপস্থিত থাকেননা। এর ফলে, অন্যান্য শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাস নিতে চান না। ফলে, চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে এ কলেজের ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ।

পুরো জাতি যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে, পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরা শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, আইনপেশাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, সেখানে কক্সবাজারের একমাত্র নারীর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশা অত্যন্ত নাজুক। সে কারণে, নারীশিক্ষাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই কলেজের শিক্ষক, ছাত্রী এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment