দেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তিতেও ফাটল! ঐতিহ্য নষ্ট হলো শাবলের আঘাতে

আগ্রার তাজমহল করতে ২২ হাজার লোকের লেগেছিল ২০ বছর। কক্সবাজারের রামুতেও তৈরি হচ্ছিল তেমনি এক শিল্পকর্ম। তবে সম্রাট শাহজাহানের মতো অতটা বিত্তশালী নন এ শিল্পকর্ম তৈরির উদ্যোক্তারা।
প্রিয়তমা স্ত্রীর মনোতুষ্টিও ছিল না এ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের আত্মার শান্তির জন্যই রামুতে তৈরি হয়েছিল ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট উচ্চতার আবক্ষ এক মূর্তি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক আগুন থেকে রক্ষা পায়নি অর্ধশত লোকের সাত বছরের পরিশ্রমে তৈরি দেশের সর্ববৃহৎ সে মূর্তিটিও। শাবল দিয়ে আঘাত করে ফাটল ধরানো হয়েছে বুদ্ধের সিংহশয্যার এ স্থাপনাটি!

ইট, পাথর ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এ মূর্তিতে বুদ্ধকে দেখা যায় বিশ্রাম নিতে। নির্জন একটি পাহাড়ের সুশীতল পরিবেশে বুদ্ধের এমন সিংহশয্যার দৃশ্য দক্ষিণ এশিয়ায় বিরল ছিল বলে মন্তব্য করেন বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মূর্তি নির্মাণের উদ্যোক্তা করুণাশ্রী থের। রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি পাহাড়ের ওপর বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনাকেন্দ্রে নির্মিত 'ভুবন শান্তি ১০০ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি'টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এখনও। আগামী ১৮ জানুয়ারি এ ঐতিহাসিক স্থাপনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এক রাতের তাণ্ডবে সব এলোমেলো হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করলেন মূর্তি উদ্বোধন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ূয়া। এখন সেটা সংস্কার করে উদ্বোধনের পর্যায়ে নিয়ে আসাটা সময়সাপেক্ষ। করুণাশ্রী ফের জানান, সংস্কারের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন মূর্তিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মন্তব্য লাগবে।
স্থানীয়রা বলছে, গৌতম বুদ্ধ জীবিত থাকতে মিয়ানমারের রাজা চন্দ্র সূর্য তাকে দাওয়াত জানান। এ দাওয়াত রক্ষা করতে ভারতবর্ষ থেকে মিয়ানমারের দিকে রওনা হন বুদ্ধ। নিজের অলৌকিক ক্ষমতাবলে আকাশপথই ব্যবহার করেন তিনি। কিন্তু কক্সবাজারের রামুতে গিয়ে থামেন বুদ্ধ। বিশ্রাম নেন রামুর রাংকুট পাহাড়ে। এ কারণে ওই পাহাড় থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে মিঠাছড়ি পাহাড়েই বুদ্ধের বিশ্রামের আদলে তৈরি করা হয়েছিল এমন সিংহশয্যা। কিন্তু দুর্বৃত্তরা ককটেল দিয়ে নষ্ট করতে চেয়েছিল তা। তাতে ব্যর্থ হয়ে শাবল দিয়ে আঘাত করে ফাটল ধরায় মূর্তিতে।
দেশের বৃহত্তম এ সিংহশয্যা বুদ্ধ মূর্তির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর। ২০১২ সালের অক্টোবরে এসে মূর্তি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ শতাংশ। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক করছেন মূর্তি নির্মাণের এ কাজ। ভিক্ষু করুণাশ্রী থের সমকালকে জানান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দানেই নির্মিত হয়েছিল সর্ববৃহৎ এ নির্দশন। তবে এককভাবে সর্বোচ্চ দান করেছেন ফ্রান্স প্রবাসী প্রশান্ত বড়ূয়া। তিনি একাই দিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে অনন্য এ শিল্পকর্মের পেছনে এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। মূর্তির রঙ ও বেদিতে টাইলস লাগানো হয়েছে। আকর্ষণীয় করতে মূর্তির গায়ে দেওয়া হয়েছিল সোনালি রঙের প্রলেপ। এ জন্য রঙ আনা হয়েছিল মিয়ানমার থেকে। কারণ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের ধাম্বাদূত বৌদ্ধবিহারে সংরক্ষিত পাঁচ ফুটের সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধের মূর্তির আদলেই নির্মিত হচ্ছিল। এতে নির্মাণশিল্পী হিসেবেও কাজ করেছিলেন ইয়াঙ্গুনের শিল্পী থোয়াইংছি রাখাইন।
রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে নির্মাণ শেষে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৬০ ফুট প্রস্থ ও ৫০ ফুট উচ্চতার গৌতম বুদ্ধের সিংহশয্যা মূর্তিটির ওপর একটি শেড দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য ঢাকা থেকে প্রকৌশলী এনে ডিজাইনও করা হয়। তিন পাশে ঘেরা থাকলেও শেডের একপাশ থাকত উম্মুক্ত। এর পাশেই থাকার কথা ছিল ভিক্ষু ও শ্রমণদের আবাসন। যে পাহাড়ে এভাবে শুয়ে থাকবেন গৌতম বুদ্ধ, সে পাহাড়ের চারপাশে তৈরি করা হবে গাইডওয়ালও। কিন্তু দুর্বৃত্তদের আঘাতে এর আগেই নষ্ট হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ মূর্তিটি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে বুদ্ধের মূর্তি থাকলেও এতবড় মূর্তি তৈরির ঘটনা ছিল এটাই প্রথম। ভারত, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারেও বুদ্ধের এতবড় সিংহশয্যা মূর্তি নেই বলে দাবি করেন এর উদ্যোক্তা করুণাশ্রী থের। চট্টগ্রামের নন্দনকাননে বুদ্ধের কেশগুচ্ছ আনা হলেও এখন তা আছে শ্রীলংকায়। তাই রামুর ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের আবক্ষ মূর্তিটি ১৫-২০ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর মধ্যে তৈরি করেছিল অন্যরকম এক আগ্রহ। নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও প্রতিদিন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর শত শত পর্যটক দেখতে আসতেন মূর্তিটি। কিন্তু এক রাতের তাণ্ডব লণ্ডভণ্ড করে দিল রামুর ঐতিহ্য ও অহঙ্কার!
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment