পর্যটন শহর কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় 'কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ' গঠন করছে সরকার। এ কর্তৃপক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ উন্নয়ন কাজ তদারক করবে। পাশাপাশি এ শহরের ভূমির পরিবর্তন ও পাহাড় কাটা বন্ধে নজরদারি চালানো, শহরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের একক কর্তৃত্ব থাকবে কর্তৃপক্ষের হাতে।
কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার মধ্যে অনুমতি ছাড়া ইমারত নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, জলাধার খনন করা যাবে না। এ সম্পর্কিত একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান সমকালকে বলেন, সুপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে। এটি গঠন হলে কক্সবাজারে উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়বে। আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে কক্সবাজার।
সূত্র জানায়, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও বিভিন্ন কারণে জায়গাটির তেমন উন্নয়ন হয়নি। সমুদ্র-তীরবর্তী সব জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। আবাসনের ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো নীতিমালা। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। নষ্ট করা হচ্ছে সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ। সব মিলিয়ে কক্সবাজার পর্যটন নগরী তার বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শহরটিকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী একজন অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা হবেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। সার্বক্ষণিক তিনজন সদস্য থাকবেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। এ ছাড়া পর্যটন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি বা সম্পাদক, সরকার মনোনীত স্থায়ীভাবে বসবাসরত দু'জন ব্যক্তি, নগর উন্নয়ন অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতরের একজন করে প্রতিনিধি কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
আইনানুযায়ী, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারে গৃহায়ন ও আবাসন সুবিধা সম্প্র্রসারণের জন্য সীমিত পরিসরে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। তারা নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় নৌ, বিমান, সড়ক যোগাযোগ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনারও উন্নয়ন করবে। চিহ্নিত করবে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার অবস্থান। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য ভূমি জোনিং করার দায়িত্ব থাকবে এ কর্তৃপক্ষের ওপর। তারা প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ অনুসরণ করে ভূমি সংরক্ষণ করবে। নতুন কর্তৃপক্ষের হাতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্বও দেওয়া হবে।
Blogger Comment
Facebook Comment