কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত দেড় বছরে দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এই সুপারিশ বাতিলের জন্য বন বিভাগ জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি। ইজারার প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার জোয়ার-ভাটাবিধৌত এসব প্রাকৃতিক বন উপকূলের প্রাচীর হিসেবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে মূল ভূখণ্ডকে রক্ষা করে আসছে। এসব বন কেটে এখন চিংড়িঘের করা হচ্ছে।
জেলার মহেশখালী উপজেলার ঘটিভাঙার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় পুরান খালের দুই পাশে ঘন বাইন ও কেওড়াগাছের সারি। বিএস ৩৩৮১ দাগের অন্তর্ভুক্ত আরও পাঁচ হাজার ৫৫৯ একর প্রাকৃতিক বনভূমিকেও ‘বনাঞ্চল নেই’ উল্লেখ করে ক্রমান্বয়ে চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় ভূমি দপ্তর। প্রস্তাবটি এখন জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
২০০৬-০৭ সালে একই প্রক্রিয়ায় ওই দাগের ১০৯ একর বনভূমিকে ‘বনাঞ্চল নেই’ দেখিয়ে স্থানীয় ১০ ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়।
বনভূমি ইজারা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলা প্রশাসকের চিংড়ি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটি গত ১৮ মাসে দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি ইজারা দিয়েছে। উন্নয়ন কমিটির সপ্তম থেকে ১২তম সভায় এসব বনভূমি ইজারা দেওয়া হয়। সপ্তম সভাটি হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাসে। ওই সভায় ৩৯২ দশমিক ৫০ একর, অষ্টম সভায় ৩৭১ একর, নবম সভায় ৮৪ একর, দশম সভায় ২১৪ একর, ১১তম সভায় ৬৭৫ একর ও গত জানুয়ারির ১২তম সভায় ৩৭৬ একর বনভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এসব ভূমির ইজারা প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য বন বিভাগ জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, ঘটিভাঙা এলাকার (৩৩৮১ বিএস দাগের) ১০৯ একর উপকূলীয় বনভূমি চিংড়ি চাষের জন্য ২০০৭ সালে ইজারা দেওয়া হয়। এই ইজারাটি বাতিলের জন্য বন বিভাগ থেকে বারবার চিঠি চালাচালি করা হয়। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ এই উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডুর সই করা একটি চিঠি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক বরাবর। ওই চিঠিতে ১০৯ একরের ইজারা বাতিল ও একই দাগের পাঁচ হাজার ৫৫৯ একরের ইজারা সুপারিশ বাতিলের অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘৩৩৮১ দাগের ১০৯ একর বনভূমি আবুল কালামসহ ১০ জনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। একই দাগের অনুকূলে বাটা দাগ দেখিয়ে আরও পাঁচ হাজার ৫৫৯ একর বনভূমি বাগান নেই বলে চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব বনভূমি বন আইনের ৪ ধারায় বিজ্ঞাপিত।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বনভূমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই ইজারা প্রস্তাব গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হলো।’
উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজারা পাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটিভাঙার ওই বনাঞ্চলের পাশের খালে বাঁধ দিয়ে বন দখল শুরু করেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে ইজারা বন্ধের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো ফল এখনো পাইনি।’
সুনীল কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘গত দেড় বছরে উন্নয়ন কমিটির সভায় দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি চিংড়ির জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এসব বনভূমি রক্ষায় বন বিভাগ আপত্তি দিয়েছে।’
জানা গেছে, কোনো ভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়ার আগে প্রথমে সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড) কার্যালয় থেকে জরিপ বা তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এসি ল্যান্ড প্রস্তাব করলে তা জেলা প্রশাসকের কাছে যায়। জেলা প্রশাসকের চিংড়ি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইজারা দলিল সম্পাদন করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটিভাঙার বনাঞ্চলের ভেতরের পুরান খালে তিন ফুট চওড়া দুটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বনের গাছ কেটে ওই বাঁধ রক্ষার জন্য খুঁটি পোঁতা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মীরা জানান, মাস খানেক আগে তারা ওই বাঁধ ভেঙে দিলেছিল। কিন্তু আবার বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু কিছু জমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর অনেকখানেই বনাঞ্চল নেই।’ তবে বন বিভাগের রেকর্ডের বাইরেও কিছু জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটিভাঙাতে বন থাকা অবস্থায় ইজারা প্রস্তাব দেওয়া প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যদি বন থেকে থাকে তাহলে আপত্তি দিলে আমরা চিংড়িঘেরের ইজারা বাতিল করে দেব। আমি আবার গিয়ে সরেজমিনে দেখব।’
এসি ল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙার চিংড়িঘের ইজারা প্রস্তাবটি আগে করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ওগুলো অনুমোদিত হয়নি। আর যেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে সেখানে বন বিভাগের বাধার মুখে এখনো অনেকে ঢুকতে পারেনি।’
বন আছে বন নেই: জানা গেছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির মধ্যে স্থানীয় জরিপকারক (সার্ভেয়ার), তহসিলদার ও বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে মহেশখালী গোরকঘাটা জেটির দুই পাশে যতদূর চোখ যায় গাঢ় বন দেখা যায়। এখানে ১৫০ একর বন রয়েছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। কিন্তু ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার ও সার্ভেয়ার প্রতিবেদন দিয়েছেন, ওখানে বন আছে মাত্র ৩২ একর।
একইভাবে আদিনাথ মন্দির জেটির পাশে পাহাড় ঠাকুরতল ও ঠাকুরতল মৌজায় বিএস ৭০২, ৭২৪ ও ৭২৬ দাগে ১৭৫ একর বন রয়েছে বলে বন বিভাগের দাবি। কিন্তু ভূমি দপ্তর মাত্র ৩০ একর বন রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। সার্ভেয়ার ও তহসিলদার বন বিভাগের মানচিত্রও কলমের কালি দিয়ে কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা এ নিয়ে আপত্তি করেছেন, কিন্তু আপত্তি টেকেনি।
বনাঞ্চল কম দেখানোর কথা স্বীকার করে মহেশখালী ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে ৭০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু এগুলো ৪ ধারায় গেজেট নোটিফিকেশন হলেও বন বিভাগ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। যেসব দাগে বনাঞ্চল আছে বলে তাঁরা দাবি করছেন সেগুলোতে সেভাবে বন নেই। আশপাশের অন্যান্য দাগেও বনাঞ্চল রয়েছে।’
তহসিলদার আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে সহকারী জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পরিদর্শনের পর নতুনভাবে প্রতিবেদন দেব।’
বিট কর্মকর্তা অসীম কান্তি দাশ বলেন, ‘এ জায়গায় বন যে রয়েছে তা তো দেখাই যায়। আমি এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করেছি। কিন্তু তারা মানতে চায় না।’
ইউএনও এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙা, গোরকঘাটা ও আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে শত শত একর বনাঞ্চল আছে। কিন্তু এগুলো এখনো খাসখতিয়ানভুক্ত না হওয়ায় বনাঞ্চল কম দেখানো হতে পারে। কিন্তু বন আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
বনভূমি ইজারা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলা প্রশাসকের চিংড়ি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটি গত ১৮ মাসে দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি ইজারা দিয়েছে। উন্নয়ন কমিটির সপ্তম থেকে ১২তম সভায় এসব বনভূমি ইজারা দেওয়া হয়। সপ্তম সভাটি হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাসে। ওই সভায় ৩৯২ দশমিক ৫০ একর, অষ্টম সভায় ৩৭১ একর, নবম সভায় ৮৪ একর, দশম সভায় ২১৪ একর, ১১তম সভায় ৬৭৫ একর ও গত জানুয়ারির ১২তম সভায় ৩৭৬ একর বনভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এসব ভূমির ইজারা প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য বন বিভাগ জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, ঘটিভাঙা এলাকার (৩৩৮১ বিএস দাগের) ১০৯ একর উপকূলীয় বনভূমি চিংড়ি চাষের জন্য ২০০৭ সালে ইজারা দেওয়া হয়। এই ইজারাটি বাতিলের জন্য বন বিভাগ থেকে বারবার চিঠি চালাচালি করা হয়। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ এই উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডুর সই করা একটি চিঠি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক বরাবর। ওই চিঠিতে ১০৯ একরের ইজারা বাতিল ও একই দাগের পাঁচ হাজার ৫৫৯ একরের ইজারা সুপারিশ বাতিলের অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘৩৩৮১ দাগের ১০৯ একর বনভূমি আবুল কালামসহ ১০ জনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। একই দাগের অনুকূলে বাটা দাগ দেখিয়ে আরও পাঁচ হাজার ৫৫৯ একর বনভূমি বাগান নেই বলে চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব বনভূমি বন আইনের ৪ ধারায় বিজ্ঞাপিত।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বনভূমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই ইজারা প্রস্তাব গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হলো।’
উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজারা পাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটিভাঙার ওই বনাঞ্চলের পাশের খালে বাঁধ দিয়ে বন দখল শুরু করেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে ইজারা বন্ধের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো ফল এখনো পাইনি।’
সুনীল কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘গত দেড় বছরে উন্নয়ন কমিটির সভায় দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি চিংড়ির জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এসব বনভূমি রক্ষায় বন বিভাগ আপত্তি দিয়েছে।’
জানা গেছে, কোনো ভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়ার আগে প্রথমে সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড) কার্যালয় থেকে জরিপ বা তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এসি ল্যান্ড প্রস্তাব করলে তা জেলা প্রশাসকের কাছে যায়। জেলা প্রশাসকের চিংড়ি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইজারা দলিল সম্পাদন করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটিভাঙার বনাঞ্চলের ভেতরের পুরান খালে তিন ফুট চওড়া দুটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বনের গাছ কেটে ওই বাঁধ রক্ষার জন্য খুঁটি পোঁতা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মীরা জানান, মাস খানেক আগে তারা ওই বাঁধ ভেঙে দিলেছিল। কিন্তু আবার বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু কিছু জমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর অনেকখানেই বনাঞ্চল নেই।’ তবে বন বিভাগের রেকর্ডের বাইরেও কিছু জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটিভাঙাতে বন থাকা অবস্থায় ইজারা প্রস্তাব দেওয়া প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যদি বন থেকে থাকে তাহলে আপত্তি দিলে আমরা চিংড়িঘেরের ইজারা বাতিল করে দেব। আমি আবার গিয়ে সরেজমিনে দেখব।’
এসি ল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙার চিংড়িঘের ইজারা প্রস্তাবটি আগে করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ওগুলো অনুমোদিত হয়নি। আর যেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে সেখানে বন বিভাগের বাধার মুখে এখনো অনেকে ঢুকতে পারেনি।’
বন আছে বন নেই: জানা গেছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির মধ্যে স্থানীয় জরিপকারক (সার্ভেয়ার), তহসিলদার ও বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে মহেশখালী গোরকঘাটা জেটির দুই পাশে যতদূর চোখ যায় গাঢ় বন দেখা যায়। এখানে ১৫০ একর বন রয়েছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। কিন্তু ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার ও সার্ভেয়ার প্রতিবেদন দিয়েছেন, ওখানে বন আছে মাত্র ৩২ একর।
একইভাবে আদিনাথ মন্দির জেটির পাশে পাহাড় ঠাকুরতল ও ঠাকুরতল মৌজায় বিএস ৭০২, ৭২৪ ও ৭২৬ দাগে ১৭৫ একর বন রয়েছে বলে বন বিভাগের দাবি। কিন্তু ভূমি দপ্তর মাত্র ৩০ একর বন রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। সার্ভেয়ার ও তহসিলদার বন বিভাগের মানচিত্রও কলমের কালি দিয়ে কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা এ নিয়ে আপত্তি করেছেন, কিন্তু আপত্তি টেকেনি।
বনাঞ্চল কম দেখানোর কথা স্বীকার করে মহেশখালী ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে ৭০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু এগুলো ৪ ধারায় গেজেট নোটিফিকেশন হলেও বন বিভাগ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। যেসব দাগে বনাঞ্চল আছে বলে তাঁরা দাবি করছেন সেগুলোতে সেভাবে বন নেই। আশপাশের অন্যান্য দাগেও বনাঞ্চল রয়েছে।’
তহসিলদার আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে সহকারী জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পরিদর্শনের পর নতুনভাবে প্রতিবেদন দেব।’
বিট কর্মকর্তা অসীম কান্তি দাশ বলেন, ‘এ জায়গায় বন যে রয়েছে তা তো দেখাই যায়। আমি এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করেছি। কিন্তু তারা মানতে চায় না।’
ইউএনও এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙা, গোরকঘাটা ও আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে শত শত একর বনাঞ্চল আছে। কিন্তু এগুলো এখনো খাসখতিয়ানভুক্ত না হওয়ায় বনাঞ্চল কম দেখানো হতে পারে। কিন্তু বন আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
Blogger Comment
Facebook Comment