কাঁকড়া রফতানি করে আয় দুইশ’ কোটি টাকা

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে উত্পাদিত দুইশ’ কোটি টাকার কাঁকড়া রফতানি করে সরকারের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন কাঁকড়া চাষীরা।

চিংড়ি চাষের মতো কাঁকড়া চাষীদের সুদমুক্ত ঋণসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে কাঁকড়া চাষাবাদ সম্প্রসারিত হয়ে আরও দ্বিগুণ কাঁকড়া বিদেশে রফতানি করতে পারবে বলে কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের অভিমত।
সরেজমিন উখিয়ার পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী, টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, ঝিমনখালী, মৌলভীবাজার, হ্নীলা, উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে— চিংড়ি চাষের পাশাপাশি প্রায় ৫শ’ একর জমিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। উখিয়ার বালুখালী গ্রামের কাঁকড়া ঘের মালিক আহমুদুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। প্রতিবছর ১ একর জমিতে কাঁকড়া চাষ করেন। যাবতীয় ব্যয়ভার পুষিয়ে লক্ষাধিক টাকা মুনাফা হয়। এভাবে আরও অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়ে কাঁকড়া চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তারা জানান, চিংড়ি চাষাবাদে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি, পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। চিংড়ি চাষাবাদ অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এ পেশা ছেড়ে দিয়ে কাঁকড়া চাষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পালংখালীর কাঁকড়া ব্যবসায়ী ছৈয়দ আলম জানান, তিনি ২ একর জমি বর্গা নিয়ে কাঁকড়া চাষ করেছেন। শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচের টাকা বাদ দিয়ে প্রতিবছর তার দু’লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। টেকনাফ উপজেলার উলুবুনিয়া গ্রামের কাঁকড়া ব্যবসায়ী আবদুস শুক্কুর, সিরাজুল মোস্তফা, কমল বড়ুয়া, জাফর আলম জানান, উখিয়া-টেকনাফে বর্তমানে ২৫টি গ্রামে ৫শ’ একর জমিতে কাঁকড়ার চাষ ও উন্নয়ন হচ্ছে। কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর এ খাত থেকে তারা সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিলেও তারা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। কাঁকড়া রফতানি করে উখিয়া-টেকনাফ থেকে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা জাতীয় অর্থনীতিতে জোগান দিয়ে থাকে। কাঁকড়া চাষী মাহমুদুর রহমান ২০-২৫ বছর ধরে কাঁকড়া চাষ করে আসছি। এক একর কাঁকড়া চাষে দু’দিনে চল্লিশ কেজি মুরগির মাংস দিতে হয়। প্রতি মাসে খাবার বাবদ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কাঁকড়া সংগ্রহকারী লিটন বড়ুয়া ও শিবু বড়ুয়া জানান, মাছ চাষের মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাঁকড়ার একক চাষ করা হলে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁকড়া রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে কাঁকড়া সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ওই কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করে তা বিদেশে রফতানি করে থাকে। কাঁকড়া রফতানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও চিংড়ি চাষাবাদের ওপর সরকারের যে সুদৃষ্টি রয়েছে, কাঁকড়া চাষাবাদে তা নেই। যার ফলে কাঁকড়া চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে না।
কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ৫টি গ্রেডে কাঁকড়া বিক্রি করা হয়। ১ম গ্রেড ৬শ’ থেকে ১ হাজার, ২য় গ্রেড সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’, ৩য় গ্রেড সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ, ৪র্থ গ্রেড ১শ’ থেকে ১২০, ৫ম গ্রেড ৬০ থেকে ১শ’। আরকান রফতানিযোগ্য কাঁকড়া সরবরাহকারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বাবুল বলেন, উখিয়া-টেকনাফ থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার কাঁকড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে সরকার প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কাঁকড়া চাষের উন্নয়ন সম্প্রসারণের পাশাপাশি কাঁকড়া চাষীদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হলে রফতানি করা কাঁকড়ার ২০ শতাংশ উখিয়া-টেকনাফে উত্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment