কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যান। ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সড়কের বিভিন্ন অংশে। এতে নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। কিন্তু সংস্কারের উদ্যোগ নেই।
রামু উপজেলার সীমান্ত বাণিজ্যের অন্যতম রামু-মরিচ্যা সড়ক এক মাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে সৃষ্ট অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন দফা বন্যায় পল্গাবিত এ সড়কের অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত, খানা-খন্দ আরও গভীর হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

রামু-মরিচ্যা সড়কে সার্বক্ষণিক হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে আসছে। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক প্রতিদিন এ সড়কে দিয়ে চলাচল করছে। রামু-মরিচ্যা সড়কে ৬ বছর ধরে যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় পণ্যবাহী এসব যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট গর্তে পড়ে অকেজো হচ্ছে পাওয়ার বাইক, বেবিট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, কার, জিপ, ট্রাক-মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। ভেঙে যাচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, ইনানীসহ পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সীমান্ত বাণিজ্যের ব্যবসায়ীরা। ২৬ জুন ভয়াবহ বন্যায় পল্গাবিত হয়ে অফিসেরচর ডাকবাংলো এলাকা পুকুর পরিমাণ গর্ত সৃষ্ট হওয়ায় এ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এক মাস ধরে।
রামু চৌমুহনী থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের বিভিন্ন অংশে খোয়া, পিচ, কার্পেটিং উঠে গিয়ে হাজার হাজার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও ইট, কংকর সরে গিয়ে ৭-৮ ইঞ্চি, কোথাও কোথাও এক-দেড় ফুট গভীর গর্ত ও অনেক স্থানে দেবে গেছে। তিন দফা বন্যায় সড়কের ওই গর্তগুলো আরও বড় হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এক মাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় এ সড়কে চলাচলকারী সেনাসদস্য, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীসহ জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এ সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা না হলে যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয় বেবিট্যাক্সিচালক আবদুল হক ও আবু তাহের।
রামু লাইন সার্ভিসের পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, এ সড়কটির পুরো অংশে হাজার হাজার গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় গাড়িগুলো ধীরগতিতে চালাতে হয়। এতে প্রায় সময়ই দিনদুপুরে যানবাহনগুলো ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়। সন্ধ্যা হলেই এ সড়কে চালকরা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে। এর উপর বন্যাপল্গাবিত হয়ে এক মাস ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রামু থানার ওসি নজিবুল ইসলাম জানান, বেশি ওজনের পণ্যবোঝাই ট্রাক ও নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চলাচলের কারণে এ সড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পেঁৗছাতে পারে না। এ সড়কের শিকলঘাট ও নাশিরকুল ব্রিজ দুটির অবস্থা আরও খারাপ। বন্যায় পল্গাবিত হওয়ার কারণে এ সড়কে চলাচলকারীরা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্যায় অফিসেরচর ডাকবাংলো এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই স্থানের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করায় সড়ক মেরামতের কাজ বিলম্ব হচ্ছে।
উখিয়া : কক্সবাজার-টেকনাফ ৭৯ কিলোমিটার সড়কে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত না হওয়ার আগে সওজ বিভাগ নির্মাণ কাজে হাত না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ষাকালে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ-কালভার্ট ধসে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ যাত্রী সাধারণ।
কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে বালুখালী পর্যন্ত যেসব ব্রিজ-কালভার্ট নির্মিত হয়েছে ওইসব ব্রিজ-কালভার্ট পাকিস্তানি আমলের তৈরি। এসব ব্রিজ-কালভার্টের গায়ে স্পষ্ট লিখা রয়েছে নির্মাণ সাল ১৯৩২, ১৯৪৫ ও ১৯৫২। এসব ব্রিজ-কালভার্টের মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হওয়ার পরও সে সময় টেকসই নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হওয়ার কারণে প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহন নিরাপদে চলাচল করছে। অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্টের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে অসংখ্য পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি। উখিয়া সদর ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোনা মিয়া জানান, বর্ষাকালে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্রিজ-কালভার্ট ধসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আগেভাগে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ-কালভার্টগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের নয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট নতুন করে নির্মাণর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
Blogger Comment
Facebook Comment