কক্সবাজারে এক হাজার পরিবার পানিববন্দী

কক্সবাজার জেলার ৩ উপজেলার বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া, রামু ও উখিয়া উপজেলার অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরীর পানি বিপদসীমাও ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে ৩ দিনে জেলার চকরিয়া উপজেলায় ৩ জন ও রামু উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, মঙ্গলবার রাত থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টির কারণে চকরিয়া উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার, রামু উপজেলার ৩ শতাধিক পরিবার ও উখিয়া উপজেলার ২ শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যায় চকরিয়ায় তিনজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার জাকির হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চিড়া ও গুড় বিতরণ করা হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে চাল বিতরণ এবং যারা মারা গেছে তাদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। 

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী মনছুর বাংলানিউজকে জানান, দুইদিনের ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ছাড়াও অর্ধশত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গেছে দক্ষিণ কাকারার গুরা মিয়ার দেড় বছর বয়সী ছেলে শাহরিয়ার, পূর্ব কাকারা পাহাড়তলী এলাকার এনামুল হকের ছেলে মোহাম্মদ অনিক (১০) ও অপর এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এ ইউনিয়নের রসুলাবাদ, ডেইঙ্গাকাটা, বিবিরখিলসহ আরও কয়েকটি গ্রামের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী।

বন্যার শুরুতে পানির স্রোতে ভেসে মারা গেছে ডেইঙ্গাকাটা এলাকার আবু তাহের মনুর শিশুকন্যা শিমু আক্তার (৫)।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার বাংলানিউজকে জানান, মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত কয়েকটি ওয়ার্ডের অন্তত অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার বাঁকখালী নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে রামু উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পানিতে ডুবে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে পুরো ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএম নুরুস ছাফা বাংলানিউজকে জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পুরো ইউনিয়ন ডুবে গেছে। এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া সংযোগ সড়কে নির্মিত মরহুম খালেকুজ্জামান সেতুটি কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই সেতুর দক্ষিণ পাশে সীমানা দেয়াল ও সংযোগ সড়কের একাংশ বাঁকখালী নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে দুদিন ধরে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন এবং মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রামুর দক্ষিণ সীমান্ত জনপদের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, প্লাবনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পর এবার বন্ধ হয়ে গেছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক।

১৯ জুলাই দিনগত রাত ১২ টা থেকে রেজু ব্রিজের একটি অংশ ভেঙে যাওয়ার পর এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। ফলে কক্সবাজারের সঙ্গে উখিয়া ও টেকনাফের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রেজু ব্রিজের ভেঙে যাওয়া অংশের সংস্কার কাজ করছে ১৭ ইসিবির সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া টানা বৃষ্টি, সমুদ্রের জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উখিয়ার প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জেলার বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment