মিয়ানমারে দাঙ্গা অব্যাহত, সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে মুসলিম-রাখাইন সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মংডু টাউনশিপ ও এর আশপাশের এলাকা সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দাঙ্গা এখনো অব্যাহত আছে। এদিকে বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে।

জানা যায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মংডু এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি বলবত রেখেছে। এর মাঝেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সেদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাবাহিনী ওয়েস্টার্ন জোন কমান্ডার মেজর জেনারেল টোন নে লিনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা মংডু এলাকা সফর করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
তারা উত্তেজিত মুসলমান ও রাখাইন গ্রামগুলো পরিদর্শন করে জনতাকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। বিশেষ করে তারা মুসলমানদের বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সিকদারপাড়া মারকাজ মসজিদ পরিদর্শন করে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুসলমান, রাখাইন ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গ্রামে গ্রামে শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বৈঠকে মুসলিমদের পক্ষে শাহনেওয়াজ, মাস্টার জমিল আহমদ, মাস্টার জাহাঙ্গীর, মাওলানা আব্দুল্লাহ, হাজি কলিম উল্লাহ, মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন বলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে একজন নিশ্চিত করেছেন।

এর মাঝেও শনিবার বিকেলে মংডু হাইন্দাপাড়া এলাকায় রাখাইনদের হামলায় দুই মুসলমান যুবকের মৃত্যু ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের একজন হলেন খাইন্দা পাড়ার নুরুল হকের ছেলে মো. নুর। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি। শুক্রবারের সহিংস ঘটনার পর এখনো সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 টেকনাফ সীমান্ত পরিস্থিতি

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ট্রানজিট যাতায়াত শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। এছাড়া টেকনাফ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ৮ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে সাত ব্যবসায়ী মংডু নৌ ঘাটে গিয়েও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সেদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের  ঢোকার অনুমতি না দেয়ায় তার ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বৈধভাবে মিয়ানমারে যাওয়া ৫৫ জন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও মিয়ানমারের ২৭১ ব্যক্তি এদেশে রয়েছেন।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছেন, রোববার এসব ব্যবসায়ীরা স্ব স্ব দেশে যাতায়াতের জন্য মিয়ানমার ইমিগ্রেশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে শুক্রবার দুটি ও শনিবার একটি পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে বন্দর ম্যানেজার আবু নুর মো. খালেদ জানিয়েছেন। তবে সহিংস ঘটনা অব্যাহত থাকলে আমদানি-রফতানিতে প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান।

টেকনাফস্থ বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মেজর মো. শফিকুর রহমান জানান, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে টেকনাফে বসবাস ও কর্মরত রাখাইনরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এদিনও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। শনিবার টেকনাফে জুয়েলারি কাজে নিয়োজিত কক্সবাজার ও মহেশখালী এলাকার বেশকিছু রাখাইন স্বর্ণকার আতঙ্কিত হয়ে স্ব-স্ব বাড়ি ঘরে চলে যেতে চাইলে পথিমধ্যে যেকোনো ধরনের সহিংস ঘটনার আশঙ্কায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা কর্মস্থলে থেকে যায়।

রাখাইন কমিউনিটি লিডার মং উইন মিনথ রাখাইন জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসনের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার শনিবার টেকনাফের রাখাইন গ্রাম হ্নীলা চৌধুরীপাড়া ও হোয়াইক্যং খারাংখালী, নয়াপাড়া ও কুতুপালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করে সবাইকে ধৈর্য ধরে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত শুক্রবারের মুসলমান-রাখাইন জাতিগত সংঘর্ষে মুসলমান ও রাখাইনরা পরস্পরের শতাধিক বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়। এ সময় মুসলিম-রাখাইন ও মুসলমানদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের সংঘর্ষে ২০ জনের মতো নিহতের ঘটনা ঘটে বলে মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment