ডাকছে সাগরের ঢেউ, পাহাড়ি ঝরনা

ঈদের টানা কয়েক দিনের ছুটিটা কোথায় কাটাবেন ভাবছেন? খুব বেশি চিন্তা না করে চলে যেতে পারেন কক্সবাজারে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি পাহাড়-অরণ্য আর নদী-ঝরনা সেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির কোলে।

ইচ্ছে করলে ছুটে যেতে পারেন জলজ পাখি আর কাঁকড়ার রাজ্যে, এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে।
স্বাগতম: বাইপাস সড়ক ধরে কক্সবাজার শহরে ঢুকতেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সাগরের উচ্ছ্বসিত রূপ দেখে। এই সময় সাগর এমনিতে উত্তাল থাকে। উত্তাল ঢেউ দেখে ইচ্ছে করবে ঢেউয়ের সঙ্গে গড়াগড়ি করতে। কিন্তু নেমে পড়ার আগে একটু সাবধান; জোয়ার-ভাটা দেখে সাগরে নামতে হবে! নইলে বিপদ হতে পারে।
সৈকতের একেবারে কাছে কলাতলী চত্বর। সেখানে আকাশেই দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী হাঙর, ডলফিন, তিমিসহ কত কিছু! এরাই স্বাগত জানাবে আপনাকে। এসব প্রাণীর ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছবিও তুলে নিতে পারেন। তারপর সোজা নেমে যেতে পারেন সৈকতে। নরম এই বালুচরে সকাল-বিকেল খালি পায়ে হাঁটাচলা, দৌড়ে রাজ কাঁকড়া ধরার আপ্রাণ চেষ্টার পাশাপাশি দেখতে পাবেন গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসার দৃশ্য।
পাখি আর রাজ কাঁকড়ার মেলা: জলজ পাখি আর রাজ কাঁকড়ার মেলা বা দৌড়ঝাঁপ দেখতে হলে যেতে হবে নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, পেঁচারদিয়া অথবা সোনাদিয়ায়। কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে হিমছড়ি গেলেই পেঁচারদিয়া সৈকত। রিকশা, টমটম, অটোরিকশা, জিপ বা যাত্রীবাহী বাসে আসা-যাওয়া করা যায়। ভাড়া ২০ থেকে ১০০ টাকা। পেঁচারদিয়া নিরিবিলি এলাকা বলে সেখানে সৈকতজুড়ে দেখা মেলে রাজ কাঁকড়ার মহাসমাবেশ। জলের ধারে দেখতে পাবেন হাজার হাজার জলজ পাখি। উড়ছে যত পাখি, বসে আছে তার চেয়েও অনেক বেশি। ইচ্ছে করবে সারাটা দিন কাঁকড়া আর পাখিদের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে। আরও বেশি কাঁকড়া ও পাখি দেখতে হলে যেতে হবে নাজিরারটেক, ফদনারডেইল। শহর থেকে ২০ টাকা রিকশাভাড়ায় যাওয়া যায় নাজিরারটেক। সেখান থেকে বালুচর ধরে হেঁটে হেঁটে যেতে হবে ফদনারডেইল। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। ফদনারডেইল থেকে আধা ঘণ্টা হাঁটলে শহরের মূল পয়েন্ট লাবণী সৈকতে আসা যায়। নাজিরারটেক থেকে সোনাদিয়ায় যেতে হয় স্পিডবোট দিয়ে। সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। ভাড়া আসা-যাওয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।
পাহাড়চূড়ার দরিয়ানগর: কক্সবাজার শহর থেকে ‘দরিয়ানগর’ পর্যটন পল্লির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। বাসভাড়া ২০ টাকা। তারপর ২০ টাকায় টিকিট কেটে বিশাল একটি হাঙরের মুখ দিয়ে ঢুকে যেতে হবে দরিয়ানগরে। এরপর পাকা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা। মাঝেমধ্যে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো পাড়ি দেওয়া। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সময় ক্লান্ত শরীরকে একটু বিশ্রাম দিতে পথে পথে বসানো আছে চেয়ার আর দোলনা।
শাহেন শাহ গুহা: দরিয়ানগরের ৭০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের নিচে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা একটি সুড়ঙ্গ হলো এই গুহা। এর একটু দক্ষিণে কিংবদন্তি ‘পরিমুরা’, যাকে ‘হিমছড়ি ঝরনা’ বলে জানে সবাই। কথিত আছে, বানাছা পরির কন্যা হিমপরি তার সখিদের নিয়ে সমুদ্রস্নান সেরে এই পাহাড়ে আড্ডা দিতেন। তাই হিমপরির নামে জায়গার নামকরণ ‘হিমছড়ি’।
হিমপরি মাঘী পূর্ণিমার রাতে তাঁর সখীদের নিয়ে সমুদ্রস্নান সেরে এই পাহাড়ের নিচে নৃত্যগীতও করতেন। আর সেই সময় নৃত্যরত পরিদের রূপ থেকে চারদিকে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে পড়ত। এই পাহাড়েরই নিচে ভয়ংকর ওই গুহা।
কথিত রয়েছে, একসময় এই হিমছড়িতে এক আরব বণিকের তরী ডুবে গিয়েছিল। সেই তরীর এক যুবা পুরুষ হচ্ছেন শাহেন শাহ। তিনি ঝরনার মিষ্টি পানি পান করতে এসে হিংস্র বন্য প্রাণীর কবলে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি দৌড়ে ওই গুহায় আশ্রয় নেন। পরবর্তী এক মাঘী পূর্ণিমা রাতে পরিদের নৃত্যগীত শুনে শাহেন শাহ গুহা থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর রূপে মুগ্ধ হলেন হিমপরি। তারপর দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর প্রেম-ভালোবাসা। এরপর একদিন শাহেন শাহকে নিয়ে হিমপরি নিরুদ্দেশ হলেন। কিন্তু ভ্রমণার্থীদের জন্য রয়ে গেল শাহেন শাহ গুহাটি।
শাহেন শাহ গুহায় ঢোকার সময় একটু সতর্ক থাকতে হয়; বিশেষ করে বর্ষার সময় গুহার নিচে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে। পিচ্ছিল পাথরের ওপর চলার সময় পা পিছলে পড়ে যেতে পারেন। এই সময় সাপের উপদ্রবও থাকে। গুহার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে একাধিক ঝরনা নজরে পড়বে। এসব ঝরনার ঠান্ডা জলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতে পারেন।
পাহাড়-নদী কত কিছু: পশ্চিম পাশে বিশাল বঙ্গোপসাগর আর পূর্ব পাশে উঁচু পাহাড়। এই সাগর আর পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে প্রায় ৮৪ কিলোমিটারের লম্বা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই সড়ক ধরে কক্সবাজার শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার গেলে হিমছড়ি ঝরনা। ঝরনার পাশে সিঁড়ি বেয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠে বঙ্গোপসাগর দেখতে পারেন। তখন মনে হবে, আপনি সাগরের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন।
এখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার গেলে পাথুরে সৈকত ইনানী। এখানে দেখতে পাবেন, কানা রাজার সুড়ঙ্গ, হ্যাচরি জোন ও সারিবদ্ধ সুপারি বাগান। তারপর আরও ৩০ কিলোমিটার গেলে নজরে পড়বে টেকনাফ সীমান্ত। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার। টেকনাফ থানার ভেতরে ঐতিহাসিক প্রেমের সাক্ষী ‘মাথিন কূপ’। ইচ্ছে করলে টেকনাফ থেকে জাহাজে করে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন চলে যেতে পারেন। তবে সাগর উত্তাল থাকলে এদিকে না যাওয়াই ভালো। কক্সবাজার থেকে সকালে গিয়ে বিকেলে টেকনাফ থেকে ফিরে আসা যায়। বাস ও মাইক্রোবাসে ভাড়া জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
কক্সবাজার ফিরে সন্ধ্যার পর সৈকতের ঝিনুক মার্কেট ও শহরের টেকপাড়ার বার্মিজ মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন
যাতায়াত: ঢাকা থেকে বিমানে অথবা বাসে সরাসরি কক্সবাজার আসা যায়। ভাড়া বিমানে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। বাসে ৪৯০ থেকে এক হাজার ৮৬০ টাকা।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment