কক্সবাজারের কুতুবদিয়া-পেকুয়ায় কয়েক যুগ আগে হাজার হাজার কামারের বসবাস ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় অভাব-অনটনে কামার সম্প্রদায় পুরনো পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
২০০২ সালে ২৭ এপ্রিল পেকুয়া উপজেলা গঠিত হলেও এর প্রায় চার যুগ আগেও কামার সম্প্রদায়ের কাজ কর্মে গতি ছিল বেশি। বর্তমানে আধুনিক যুগের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কামার সমপ্রদায় তাল মেলাতে পারছে না।
এক সময় কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ, ধুরুং বাজার কৈয়ারবিল ও পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, পেকুয়া সদর বারবাকিয়া, শিলখালী ও টৈটং ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক হাট-বাজারে কামার সমপ্রদায়ের সুসজ্জিত দোকান ছিল এবং উলিল্গখিত ইউনিয়নের বাজারগুলোয় তাদের আনাগোনা ছিল স্থানীয় জনসাধারণের চোখে পড়ার মতো। বহু যুগ ধরে কামাদের তৈরি জিনিসপত্র মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মানুষ আধুনিক যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোহার তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নানা উত্পাদনে তৈরি বিদেশি সামগ্রীর ব্যবহারে ব্যাপকভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে বিশেষ করে পেকুয়ার কামার সমপ্রদায়ের শিল্পকর্ম ও তাদের জীবিকায়নে ব্যাপক হারে ধস নেমেছে। কুতুবদিয়া-পেকুয়ায় বহু কামার সম্প্র্রদায় তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছে। যারা কষ্ট করে তাদের পুরনো পেশা ধরে রেখেছে তাদের এখন দুর্দিন চলছে। পেকুয়া বাজারের কামার সমপ্রদায়ের জনৈক চন্দন কুমার কর্মকার, যোগেস চন্দ্র কর্মকার, রাহুল চন্দ্র কর্মকার, নিলয় চন্দ্র কর্মকার, দীনাশ চন্দ্র কর্মকার, রাসেল চন্দ্র কর্মকার, বারবাকিয়া বাজারের হেমন্তি চন্দ্র কর্মকার, তার ছেলে নীলু চন্দ্র কর্মকার, মনোরঞ্জন চন্দ্র কর্মকারসহ আরও দুই শতাধিক কামার সমপ্রদায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবগঠিত এই পেকুয়া উপজেলায় আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ভারতীয় উপ-মহাদেশের উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা, কুচবিহার থেকে নৌপথে এসে পেকুয়া-কুতুবদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জনবসতি গড়ে তুলে এবং জীবিকার তাগিদে পেশা হিসেবে কামার পেশাকে বেছে নেয়।
বারবাকিয়ার মালতি কুমার কর্মকার বলেন, পারিবারিক ও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য এ কামার পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা সংগ্রাম করেছি। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি ও লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের পেশাকে ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
Blogger Comment
Facebook Comment