রামুর মেরংলোয়া বড়ূয়া পাড়ার ৬০ বছরের বৃদ্ধা অনঙ্গ বালা বড়ূয়া। বাড়িঘর আসবাবপত্র, ব্যবহারের পোশাক সবই পুড়ে গেছে এ বিধবার।
তিনি আহাজারি করছেন পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ৬০ কেজি চাল নিয়ে। সেনাবাহিনী একটি তাঁবু দিয়ে আপাতত মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে তার ৬ সদস্যের পরিবারকে। বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তাঁবুর সামনে বসে পোড়া চাল নিয়ে আহাজারি করছেন এ বৃদ্ধা। কালো হয়ে যাওয়া চালগুলো একটি পাত্রে সাজিয়ে রেখেছেন। খাওয়া যাবে না, তবুও চালগুলো নিয়ে চলছে বৃদ্ধার শোকের মাতম। তিনি জানান, 'ঘরবাড়ি গেইয়ে এখন আকাশর নিচে থাইক্কম। ড্রামে ৬০ কেজি চইল আছিল, সব পুড়ে গেইয়ে। এখন কি খাই বাইচ্চম (বাড়িঘর গেছে এখন না হয় আকাশের নিচে থাকব; কিন্তু ৬০ কেজি চাল ছিল, পুড়ে গেছে, এখন কি খেয়ে বাঁচব)।' অনঙ্গ বালা আরও জানান, শনিবার রাত দেড় টার দিকে 'নারায়ে তকবির' স্লোগান দিয়ে কিছু লোক পাড়ায় ঢুকে পড়ে। তারা বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। পরে পেট্রোল ঢেলে ঘরে আগুন দেয়। নিমিষেই সব পুড়ে শেষ।
পাশেই প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির সীমা বিহার। কাঠের তৈরি প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দির পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভান্তে শীলা প্রিয় বড়ূয়া জানান, এখানে অনেক দামি বৌদ্ধ মূর্তি ছিল। দুষ্কৃতকারীরা ৪০টির বেশি মূর্তি ভেঙে ফেলেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক প্রাচীন নিদর্শন লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি জানান, সীমা বিহার এ দেশের প্রাচীন একটি মন্দির। দুর্বৃত্তদের নারকীয় তাণ্ডবে দর্শনীয় সব নিদর্শন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মেরংলোয়া গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক সুমথ বড়ূয়া জানান, রামুতে সহিংস ঘটনায় ১৩টি বৌদ্ধ মন্দিরে ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। পর্যটকদের জন্যও দর্শনীয় স্থান ছিল এ বৌদ্ধ মন্দির। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মূল্যবান এ নিদর্শন আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
Blogger Comment
Facebook Comment