রামুর ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং নকশা অনুযায়ী করা হয়েছেঃ সাংবাদিকদের মিজানুর রহমান

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে রামুতে বৌদ্ধমন্দির পোড়ানোর ঘটনাটি হঠাৎ উত্তেজনাবশত হয়নি। এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং নকশা অনুযায়ী করা হয়েছে। এখানে সংখ্যালঘু মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হয়েছে; যাতে তাদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার হীনপ্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কক্সবাজারের রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা তুলে ধরেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় কয়েক হাজার মানুষ ৩০০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এতে ছোটবড় প্রায় সাড়ে তিন শ বুদ্ধমূর্তি পুড়ে যায়। মিজানুর রহমান বলেন, ‘যখনই কাজটি হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে এই জঘন্যতম ঘটনা ঘটত না। রামুর চারপাশ ঘুরে আজ শুধু বর্বরতা দেখলাম। প্রশাসন সজাগ থাকলে এটা দেখতে হতো না। প্রশাসনের উদাসীনতা আর নিষ্ক্রিয়তায় এটা সম্ভব হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমি জানতে পেরেছি, অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর, লুটপাটের আগেই মিছিল সমাবেশ হয়েছে। এটা প্রশাসনের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময়। পুলিশ প্রশাসন বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে পুলিশ চরমভাবে ব্যর্থ। তাই ওই দিন যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।’
এ সময় কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে বলেন, হামলার সময় উখিয়ার শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের আনা হয়েছে। একটি পরিবহনের গাড়িতে রোহিঙ্গাদের আনা-নেওয়া হয়েছে। রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফয়েজুল্লাহ মো. হাসান এসব গাড়ি ভাড়া করে দেন। এ সময় মিজানুর রহমান রামুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সেলিম উদ্দিনের ভূমিকার কথা জানতে চাইলে উপস্থিত অনেকে বলেন, তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে (মন্দিরে হামলার আগে) প্রথম বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং বক্তৃতা করেন। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আজ এই মন্দিরের বড় ভান্তের (ভিক্ষু সত্যপ্রিয় মহাথেরো) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তাঁর হাত ধরে বলেছি, মন্দির পোড়ানোর ঘটনায় আমরা লজ্জিত, আমরা ব্যথিত। আমরা দুঃখিত, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। মনে করার কোনো কারণ নেই, সব বাঙালি এই বর্বরতার পেছনে রয়েছে। যারা করেছে, তারা বাঙালি নয়, তারা মুসলমান নয়, তারা বৌদ্ধ নয়, খ্রিষ্টানও নয়—তারা জঘন্যতম অপরাধী। তাদের অন্য কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। তাই অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান করতে হবে।’
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘অতি দ্রুততার সঙ্গে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং এই তদন্তের প্রক্রিয়া এবং শাস্তির প্রক্রিয়া যেন দৃশ্যমান হয়, গ্রহণযোগ্য হয়—সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তদন্তের নামে নিরীহ দরিদ্র লোকজনকে যেন আটক করা না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকায় ফিরে রামুর ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রামুর বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেলে তিনি সড়কপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রামু ত্যাগ করেন।
এদিকে তরুণ বড়ুয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ভাইস চেয়ারম্যান ফয়েজুল্লাহ মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন তিনি এলাকায় ছিলেন না। হামলার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment