কক্সবাজারে আড়াই মাসে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে বজ্রপাতে গত আড়াই মাসে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছে ১০ জন। আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। বজ্রপাতে ২০টিরও বেশি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে।

বজ্রপাত থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বজ্রপাতের সময় বড় কোনো গাছের নিচে দাঁড়ানো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বড় গাছে আর্থিং (বৈদ্যুতিক প্রবাহকে মাটিতে নামতে সহায়তা করে) থাকে। তা ছাড়া বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের খুঁটির পাশে বা নিচে অথবা খোলা জায়গায় ছাতা নিয়ে দাঁড়ানো ও হাঁটাচলা বিপজ্জনক। কারণ মাটি ও ছাতার ওপরের লৌহাদণ্ডে আর্থিং থাকে। বাসাবাড়িতে বজ্রনিরোধক তার লাগাতে হবে। এ ছাড়া বজ্রপাতের সময় বাসাবাড়ির টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও মুঠোফোন বন্ধ রাখা ভালো।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৬ মে সকাল আটটার দিকে টেকনাফে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়াপাড়ার আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর (১৫) বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ বজ্রপাত বেড়ে গেলে আলমগীর দৌড়ে কুতুবদিয়াপাড়া জামে মসজিদের পাশে একটি বড় গাছের নিচে দাঁড়ায়। এ সময় বিকট শব্দে একটি বাজ গাছটির ওপর পড়ে। এতে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আলমগীরের মৃত্যু হয়। সঙ্গে গাছের নিচে দাঁড়ানো একটি ছাগলও মারা যায়।
একই দিন বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার বাস টার্মিনাল থেকে হেঁটে নাইট্যংপাড়ার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আবু তাহেরের ছেলে আবু বক্কর (১৭) মারা যায়। একই দিন সকাল সাড়ে সাতটায় চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের মুড়াপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান সলিম উল্লাহ (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী রশিদা বেগম (৩৭)।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ টি এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বজ্রপাত প্রথমে একটি গাছে আঘাত হানে। তারপর গাছের পাশে সলিম উল্লাহর বাড়িতে লাগে। এ সময় ঘরের ভেতর থাকা স্বামী-স্ত্রী মারা যান। আহত হন পাশের বাড়ির আরেক গৃহবধূ সায়েমা আক্তার (১৯)। তাঁকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’ ওই দিন বজ্রপাতে মহেশখালীর কুতুবজোম গ্রামের লবণচাষি আবুল কালাম (৪৫) ও সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের চরপাড়ার ফরিদুল আলম (৪৩) গুরুতর আহত হন।
উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গত ১৩ মে সকাল ১০টার দিকে বজ্রপাতে চেপটখালী গ্রামের মোহাম্মদ বাবুল (২৫) মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হন আরও তিনজন। তাঁদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা চারজন একটি নৌকা নিয়ে সমুদ্র উপকূলের চেপটখালী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন।
বজ্রপাতে হতাহতের কোনো হিসাব আবহাওয়া কার্যালয়ে রাখা হয় না জানিয়ে কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। কারণ প্রচণ্ড দাবদাহে ভূমির ওপর থাকা বাতাস হালকা হয়ে ১৮ হাজার ফুটের বেশি ওপরে উঠে যায়। এ সময় নিম্নচাপ দেখা দেয়। তখন ভারসাম্যহীনতার কারণে বজ্রপাত ঘটে। আর বজ্রপাত হচ্ছে তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। তড়িৎগুলোর সংঘর্ষ হয় বলে বিকট শব্দ হয় এবং নিচের দিকে মাটি টেনে নেয় বলে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে অন্য বছরের তুলনায় চলতি সালে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাই বজ্রপাতের সংখ্যাও বাড়ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, গত ১ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত আড়াই মাসে কক্সবাজারে বজ্রপাতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। মারা গেছে প্রায় ২০টি গরু-ছাগল।
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment