সন্ধ্যা নামলেই কক্সবাজার অন্ধকার

সড়ক বাতির অভাবে পর্যটন শহর কক্সবাজারের অধিকাংশ এলাকা সন্ধ্যার পর অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে । সন্ধ্যার পর পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন না।

এমনকি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রায় তিন কিলোমিটার চলাচলের রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সড়ক ও উপসড়ক ঘুরে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সমুদ্রসৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার চলাচলের রাস্তায় (ওয়াক ওয়ে) বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও বৈদ্যুতিক তার এবং বাতি নেই। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সৈকতেও নেই কোন আলোর ব্যবস্থা। সৈকতের প্রায় তিন কিলোমিটার চলাচলের রাস্তায় প্রায় ১০/১২ টি তারবিহীন বৈদ্যুতিক খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্টে সড়ক বাতি না থাকার কারণে সন্ধ্যার পর থেকেই অন্ধকার থাকে। ফলে সেখানে প্রায় সময় চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এছাড়া কক্সবাজার শহরের অতিগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে খ্যাত সার্কিট হাউস রোডের ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি থেকে জেলা প্রশাসকের বাংলো পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক বাতি নেই। এই এলাকায় পুলিশ সুপারের বাস ভবন, হিলটপ ও হিলডাউন সার্কিট হাউস, রাডার স্টেশন, সিভিল সার্জনের বাসভবন ও অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সৈকত ও হোটেল-মোটেল জোন থেকে শহরের বার্মিজ মার্কেটে যাতায়াতের জন্য পর্যটক ও স্থানীয়রা এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। স্থানটি বিপজ্জনক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ওই সড়কের গোল চক্কর মাঠে অন্ধকার স্থানে পুলিশের একটি চৌকি আছে। সেখানে পর্যটন মওসুমে পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও অধিকাংশ সময় পুলিশ থাকে না। ওই স্থানে সার্কিট হাউস রোডের সাথে মোটেল রোডের সংযুক্ত আরো দুটি উপ-সড়কে কোন সড়ক বাতি নেই।
এছাড়া শহরের সদর হাসপাতালের পূর্ব পাশের সড়ক, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের সড়ক, হলিডে মোড়ের জেলে পার্ক ময়দান থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট, কস্তুরাঘাট, এন্ডারশন রোড, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল, চাউল বাজার, পেশকারপাড়া, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকা, বাহারছড়াসহ বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশতাধিক পয়েন্টে সড়ক বাতি নেই। এ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক বাতি না থাকার কারণে পর্যটকরা সন্ধ্যার পর কোথাও বের হতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি রাতের বেলায় এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনকে। ঢাকার সাভার থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা আবদুল করিম-নিলু দম্পত্তি বলেন, 'সন্ধ্যার পর পুরো সৈকতই থাকে অন্ধকারে। সৈকত থেকে শহরের বার্মিজ মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সময়ও সড়কের অনেক স্থানে সড়ক বাতি নেই। বিশ্বের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। শুধু সড়ক বাতি নয়, পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। '
কক্সবাজার সোসাইটির যুগ্ম আহবায়ক ও শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন কালের কণ্ঠকে জানান, পৌরসভা নাগরিকদের কাছ থেকে কর নিচ্ছে, অথচ কোন সড়কেই বাতি নেই। ইতিপূর্বে অল্প কিছু বাতি লাগানো হলেও তা অনেক আগেই অকেজো হয়ে গেছে।
অপরদিকে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, 'পর্যটক দূরের কথা স্থানীয় লোকজনইতো পৌরকর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অধিকাংশ পয়েন্টে সড়ক বাতি নেই। যা আছে তাও নষ্ট হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে আন্তরিক বলে মনে হয় না।'
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি পৌরসভার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সড়কগুলোতে অনেক বাতি লাগানো হয়েছে। এর পরও যেসব স্থানে বাতি নেই এবং বাতি নষ্ট হয়েছে সেখানে বাতি লাগানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে ।'
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রায় তিন কিলোমিটার চলাচলের রাস্তায় সড়ক বাতি ও বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাং শামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে দুই বার সংযোগ তার লাগানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই দুর্বৃত্তরা তা চুরি করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় একাধিকবার উত্থাপন করেছি। নিরাপত্তার দায়িত্ব না নিলে বার বার সরকারি অর্থব্যয়ে সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া সম্ভব কিনা তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।'
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনাটি অনেক আগের। এটি আমাদের জানা ছিল না। এখন এ ধরনের কিছু ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
Share on Google Plus

প্রতিবেদনটি পোষ্ট করেছেন: Unknown

a Bengali Online News Magazine by Selected News Article Combination.... একটি বাংলা নিউজ আর্টিকেলের আর্কাইভ তৈরীর চেষ্টায় আমাদের এই প্রচেষ্টা। বাছাইকৃত বাংলা নিউজ আর্টিকেলের সমন্বয়ে একটি অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বা আর্কাইভ তৈরীর জন্য এই নিউজ ব্লগ। এর নিউজ বা আর্টিকেল অনলাইন Sources থেকে সংগ্রহকরে Google Blogger এর Blogspotএ জমা করা একটি সামগ্রিক সংগ্রহশালা বা আর্কাইভ। এটি অনলাইন Sources এর উপর নির্ভরশীল।
    Blogger Comment
    Facebook Comment